দুধে পানি ঢালা হলো না
নবীজীর শহর মদীনা তখন আঁধার রাতের চাদর মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুমে নিঝুম। কোথাও কোন সাড়া শব্দ নেই। কোন কোন ঘর থেকে শুধু ক্ষীণ কণ্ঠে ভেসে আসছে তাহাজ্জুদের তেলাওয়াত কিংবা দু'আ মুনাজাত। এটা অবশ্য রাতের মদীনার পরিচিত আওয়াজ। সেই সময় মদীনার নির্জন পথে দুতি মানুষের ছায়া অতি সন্তপর্ণে হেঁটে চলেছে। কেন? কি তাদের উদ্দেশ্য কে জানে!
এক ঘর থেকে একটি নারী কণ্ঠের আওয়াজ পেয়ে ছায়া দুটি থেমে গেলো। এতো রাতে কীসের কথা! তাদের কৌতূহল হলো। তাই আরো কাছে গিয়ে একেবারে ঘরের সাথে লেগে দাঁড়ালো। সেই নারী কণ্ঠ ব্যস্ত হয়ে বলছে-
লায়লা! এই লায়লা! ওঠো, তাড়াতাড়ি ওঠো।
এবার এক বালিকার কণ্ঠ-
কেন মা, কী হয়েছে?
― দুধে পানি মেশাও, তবেই না বেশি লাভ হবে, আমাদের অভাব দূর হবে।
― আম্মা, আমীরুল মুমিনীন ওমর যে নিষেধ করেছেন!
― বোকা মেয়ে! ওমর কি আর এখন দেখছেন! তাছাড়া আমরা গরীব, অতসব ভাবলে কি আমাদের চলে?
― কিন্তু ওমরের রব যে দেখছেন!
― ( কিছুক্ষণ নিরবতার পর ) মা, তুমি থিক বলেছো। আমার চোখ খুলে দিয়েছো। আখেরাতের বরবাদি থেকে আমাকে রক্ষা করেছো।
সেই রাতে দুধে আর পানি মেশানো হলো না। তখন প্রায় শেষ প্রহর। ছায়া দুজন একে অন্যের দিকে তাকালো। যেমন অবাক হলো তেমনি খুশি হলো। অন্ধকারেও তাদের চেহারার উজ্জ্বলতা বোঝা গেলো। ছোট্ট কুঁড়ে ঘরটা ভালভাবে চিনে রেখে তারা ফিরে চললো।
তাদের একজন স্বয়ং আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ), অন্য জন তাঁরই বিশ্বস্ত খাদেম। গভীর রাতে মদীনায় এবং মদীনার বাইরে ঘুরে ঘুরে তিনি খবর নেন। কোথাও কোন মযলুমের 'আহ!' শোনা যায় কি না। কোথাও কোন বিধবার আর্তনাদ কিংবা ক্ষুধার্ত এতিমের কান্না ভেসে আসে কি না।
কিন্তু আজ তিনি অন্য রকম এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন। সেই রাতের ঘটনা তিনি মনে রাখলেন। তারপর একদিন পুত্র আছিমের স্ত্রী করে সেই মেয়েকে ঘরে আনলেন, যে রাতের অন্ধকারে ওমরকে নয়, ওমরের আল্লাহকে ভয় করেছিলো। আর তারই খান্দানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ন্যায় ও ইনসাফের 'মারুকী নমুনা' খলীফা হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রহঃ)।
Comments
Post a Comment
👉 মন্তব্যের ক্ষেত্রে পড়াশোনা বিডির নিয়মাবলী পড়তে ক্লিক করুন এখানে।