সাধু ভাষারীতি এবং চলিত ভাষারীতি
সাধু ভাষারীতিঃ যে ভাষারীতি অধিকতর গাম্ভীর্যপূর্ণ, তৎসম শব্দবহুল, ক্রিয়াপদের রুপ প্রাচীনরীতি অনুসারী এবং আঞ্চলিকতামুক্ত তা-ই সাধু ভাষারীতি। যেমনঃ এক ব্যক্তির দুইটি পুত্র ছিল।
চলিত ভাষারীতিঃ ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানসমূহের মৌখিক ভাষারীতি মানুষের মুখে মুখে রূপান্তর লাভ করে প্রাদেশিক শব্দাবলি গ্রহণ এবং চমৎকার বাকভঙ্গির সহযোগে গড়ে ওঠে। এই ভাষারীতিকেই চলিত ভাষারীতি বলে। যেমনঃ একজন লোকের দুটি ছেলে ছিল।
সাধু ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য
ক. সাধু ভাষার রুপ অপরিবর্তনীয়। অঞ্চলভেদে বা কালক্রমে এর কোনো পরিবর্তন হয় না।
খ. এ ভাষারীতি ব্যাকরণের সুনির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে চলে। এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।
গ. সাধু ভাষারীতিতে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এ ভাষায় এক প্রকার আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য আছে।
ঘ. সাধু ভাষারীতি সুধু লেখায় ব্যবহার হয়। তাই কথাবার্তা, বক্তৃতা, ভাষণ ইত্যাদির উপযোগী নয়।
ঙ. সাধু ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পূর্ণরুপ ব্যবহৃত হয়।
চলিত ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য
ক. চলিত ভাষা সর্বজনগ্রাহ্য মার্জিত ও গতিশীল ভাষা। তাই এটি মানুষের কথাবার্তা ও লেখার ভাষা হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এটি পরিবর্তনশীল।
খ. এ ভাষারীতি ব্যাকরণের প্রাচীন নিয়মকানুন দিয়ে সর্বদা ব্যাখ্যা করা যায় না।
গ. চলিত ভাষারীতিতে অপেক্ষাকৃত সহজ-সরল শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এটি বেশ সাবলীল, চটুল ও জীবন্ত।
ঘ. বলার ও লেখার ভাষা বলেই এ ভাষা বক্তৃতা, ভাষণ, নাটকের সংলাপ ও সামাজিক আলাপ-আলোচনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
ঙ. চলিত ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের সংক্ষিপ্তরুপ ব্যবহৃত হয়।
সাধু ও চলিত ভাষারীতির পার্থক্য
- [col]
সাধু ভাষারীতি
১. সাধু ভাষারীতি সর্বজনগ্রাহ্য লেখার ভাষা।
২. সাধু ভাষারীতি সব সময় ব্যাকরণের নিয়ম মেনে চলে।
৩. সাধু ভাষার পদবিন্যাস রীতি সুনির্দিষ্ট।
৪. সাধু ভাষায় তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি।
৫. সাধু ভাষা বক্তৃতা, ভাষণ ও নাটকের সংলাপের উপযোগী নয়।
৬. সাধু ভাষায় সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয় পদের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়।
৭. সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর, দুর্বোধ্য ও মন্থর।
৮. সাধু ভাষারীতি অপরিবর্তনীয়, তাই কৃত্রিম।চলিত ভাষারীতি
১.চলিত ভাষারীতি সর্বজনবোধ্য মুখের ও লেখার ভাষা।
২. চলিত ভাষা সব সময় ব্যাকরণের প্রাচীন নিয়ম মেনে চলে না।
৩. চলিত ভাষার পদবিন্যাস রীতি অনেক সময় পরিবর্তিত হয়।
৪. চলিত ভাষায় তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার কম।
৫. চলিত ভাষা বক্তৃতা, ভাষণ ও নাটকের সংলাপের উপযোগী।
৬. চলিত ভাষায় সর্বনাম, ক্রিয়া ও অব্যয় পদের সংক্ষিপ্তরুপ ব্যবহৃত হয়।
৭. চলিত ভাষা চটুল, সরল ও সাবলীল।
৮. চলিত ভাষারীতি পরিবর্তনশীল, তাই জীবন্ত।
Comments
Post a Comment
👉 মন্তব্যের ক্ষেত্রে পড়াশোনা বিডির নিয়মাবলী পড়তে ক্লিক করুন এখানে।