ভাষাঃ ভাব প্রকাশের মাধ্যম
মানুষের পারস্পারিক ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ভাষা। ভাব বিনিময়ের জন্য একেক সামাজের মানুষ গড়ে তুলেছে একেক রকম ধ্বনি ব্যবস্থা। মানুষ বাগযন্ত্রের সাহায্যে সৃষ্ট যেসব অর্থপূর্ণ ধ্বনির সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকেই ভাষা বলে। আর এ অর্থবোধক ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ।
ভাষা আসলে নানা ধরনের সংকেতের সমাহার। অর্থ বহন করার জন্য ভাষা সংকেত ও ধ্বনি ব্যবহার করে থাকে। আমরা মুখের নানা ভঙ্গি করে কান্না, হাসি, জিজ্ঞাসা, বিস্ময় ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করি। আবার অঙ্গভঙ্গি বা ইঙ্গিত করেও আমরা নানা ভাব বুঝিয়ে থাকি। এগুলো সবচেয়ে সরল সাংকেতিক ভাষা।
দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা সংকেতচিহ্ন দেখে কাজ করি কিংবা কাজের ধরন পরিবর্তন করি কিন্তু সব সংকেতচিহ্ন ভাষা নয়। ভাষা হচ্ছে ধ্বনি উচ্চারনের মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের বিশেষ ধরনের সংকেতচিহ্ন।
সবচেয়ে সহজতর ধ্বনি ভাষা হচ্ছে গোঙানি, কান্না, কিংবা ভাবাবেগ (যেমনঃ ওঃ, আঃ, হুঁ, ইস্); এগুলো সুনির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে। সবচেয়ে বিশদ ধ্বনি ভাষা হচ্ছে মানুষের কথা― এর মাধ্যমেই মানুষ পরস্পরের সাথে ভাব বিনিময় করে থাকে। কথা বলার সময় মানুষ নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে থাকে। এদিক থেকে ভাষাকে সংকেতচিহ্ন ও ধ্বনির সামাহার বলা চলে। কেউ যদি এমন সংকেতচিহ্ন বা ধ্বনিব্যবস্থা গড়ে তোলে যা সে ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না, তবে তা সত্যিকারের ভাষা হবে না। ভাষার একটা অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে বোধগম্যতা এবং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাব বিনিময়। যা দিয়ে পরস্পর ভাব বিনিময় করা যায় না, তা ভাষা বলে গণ্য হয় না।
কথাবার্তা বলে মানুষ যত বেশি ভাব প্রকাশ করতে পারে অন্য কোনোভাবে তা সম্ভব হয় না। মুখে উচ্চারিত ধ্বনির সাহায্যেই মানুষ প্রথমে গড়ে তুলেছে ভাষার মৌখিক রুপ। ভাষার লিখিত রুপ সৃষ্টি হয়েছে অনেক পরে। এদিক থেকে ভাষা হচ্ছে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মৌখিক ও লিখিত উপায়। ভাষার মাধ্যম হচ্ছে কথা। আমরা কথা বলি মুখ দিয়ে তৈরি ধ্বনির সাহায্যে। একে বলে বাগ্ধ্বনি।
মানুষ ধ্বনি উচ্চারণ করে বাকপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে। যেমনঃ গলনালি, দাঁত, তালু, মুখবিবর, জিহ্বা, কণ্ঠ, ওষ্ঠ, নাসিকা, স্বরতন্ত্র ইত্যাদি। এ সকল প্রত্যঙ্গের সমষ্টিকে বলা হয় বাকপ্রত্যঙ্গ বা বাগযন্ত্র। বাকপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে উচ্চারিত বাগ্ধ্বনিই হচ্ছে ভাষার মূল উপাদান।
ধ্বনির অর্থপূর্ণ মিলনে গঠিত হয় শব্দ। আর একাধিক শব্দের সমন্বয়ে অর্থের ধারাবাহিকতায় তৈরি হয় বাক্য।
একই ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের (শব্দের) অর্থ ভাষাভেদে আলাদা হতে পারে। যেমনঃ বাংলায় 'বুক' বলতে বোঝায় বক্ষ। ইংরেজিতে 'বুক' (book) অর্থ― বই। সেজন্য এক জাতির ভাষা অন্য জাতির ভাষা থেকে আলাদা। যেমনঃ বাঙালিদের ভাষা বাংলা, আরবদের ভাষা আরবি, ইংরেজদের ভাষা ইংরেজি, ফ্রান্সের মানুষের ভাষা ফরাসি, ইরানের মানুষের ভাষা ফারসি, চীনের অধিকাংশ মানুষের ভাষা ম্যান্ডারিন। আবার বাংলাদেশে বাংলার পাশাপাশি চাকমা জনগোষ্ঠী চাংমা ভাষায়, গারো জনগোষ্ঠী আচিক ভাষায় কথা বলে।
ভাষা পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীলতার কারণে ভাষাকে প্রবহমান নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। পৃথিবীর কোনো ভাষাই স্থির থাকে না। ভাষা স্থির হয়ে গেলে তা মৃত ভাষায় পরিণত হয়।
Comments
Post a Comment
👉 মন্তব্যের ক্ষেত্রে পড়াশোনা বিডির নিয়মাবলী পড়তে ক্লিক করুন এখানে।