Skip to main content

ভাষা ও ব্যাকরণ ।। পাঠ-১ঃ ভাষার পরিচয় ও সংজ্ঞা ।। ১ম খণ্ড

ভাষাঃ ভাব প্রকাশের মাধ্যম

মানুষের পারস্পারিক ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ভাষা। ভাব বিনিময়ের জন্য একেক সামাজের মানুষ গড়ে তুলেছে একেক রকম ধ্বনি ব্যবস্থা। মানুষ বাগযন্ত্রের সাহায্যে সৃষ্ট যেসব অর্থপূর্ণ ধ্বনির সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করে তাকেই ভাষা বলে। আর এ অর্থবোধক ধ্বনিই হলো ভাষার প্রাণ।

ভাষা আসলে নানা ধরনের সংকেতের সমাহার। অর্থ বহন করার জন্য ভাষা সংকেত ও ধ্বনি ব্যবহার করে থাকে। আমরা মুখের নানা ভঙ্গি করে কান্না, হাসি, জিজ্ঞাসা, বিস্ময় ইত্যাদি ভাব প্রকাশ করি। আবার অঙ্গভঙ্গি বা ইঙ্গিত করেও আমরা নানা ভাব বুঝিয়ে থাকি। এগুলো সবচেয়ে সরল সাংকেতিক ভাষা।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা সংকেতচিহ্ন দেখে কাজ করি কিংবা কাজের ধরন পরিবর্তন করি কিন্তু সব সংকেতচিহ্ন ভাষা নয়। ভাষা হচ্ছে ধ্বনি উচ্চারনের মাধ্যমে ভাব বিনিময়ের বিশেষ ধরনের সংকেতচিহ্ন।

সবচেয়ে সহজতর ধ্বনি ভাষা হচ্ছে গোঙানি, কান্না, কিংবা ভাবাবেগ (যেমনঃ ওঃ, আঃ, হুঁ, ইস্); এগুলো সুনির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে। সবচেয়ে বিশদ ধ্বনি ভাষা হচ্ছে মানুষের কথা― এর মাধ্যমেই মানুষ পরস্পরের সাথে ভাব বিনিময় করে থাকে। কথা বলার সময় মানুষ নানারকম অঙ্গভঙ্গি করে থাকে। এদিক থেকে ভাষাকে সংকেতচিহ্ন ও ধ্বনির সামাহার বলা চলে। কেউ যদি এমন সংকেতচিহ্ন বা ধ্বনিব্যবস্থা গড়ে তোলে যা সে ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না, তবে তা সত্যিকারের ভাষা হবে না। ভাষার একটা অপরিহার্য শর্ত হচ্ছে বোধগম্যতা এবং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভাব বিনিময়। যা দিয়ে পরস্পর ভাব বিনিময় করা যায় না, তা ভাষা বলে গণ্য হয় না।

কথাবার্তা বলে মানুষ যত বেশি ভাব প্রকাশ করতে পারে অন্য কোনোভাবে তা সম্ভব হয় না। মুখে উচ্চারিত ধ্বনির সাহায্যেই মানুষ প্রথমে গড়ে তুলেছে ভাষার মৌখিক রুপ। ভাষার লিখিত রুপ সৃষ্টি হয়েছে অনেক পরে। এদিক থেকে ভাষা হচ্ছে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মৌখিক ও লিখিত উপায়। ভাষার মাধ্যম হচ্ছে কথা। আমরা কথা বলি মুখ দিয়ে তৈরি ধ্বনির সাহায্যে। একে বলে বাগ্ধ্বনি

মানুষ ধ্বনি উচ্চারণ করে বাকপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে। যেমনঃ গলনালি, দাঁত, তালু, মুখবিবর, জিহ্বা, কণ্ঠ, ওষ্ঠ, নাসিকা, স্বরতন্ত্র ইত্যাদি। এ সকল প্রত্যঙ্গের সমষ্টিকে বলা হয় বাকপ্রত্যঙ্গ বা বাগযন্ত্র। বাকপ্রত্যঙ্গের সাহায্যে উচ্চারিত বাগ্ধ্বনিই হচ্ছে ভাষার মূল উপাদান।

ধ্বনির অর্থপূর্ণ মিলনে গঠিত হয় শব্দ। আর একাধিক শব্দের সমন্বয়ে অর্থের ধারাবাহিকতায় তৈরি হয় বাক্য।

একই ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের (শব্দের) অর্থ ভাষাভেদে আলাদা হতে পারে। যেমনঃ বাংলায় 'বুক' বলতে বোঝায় বক্ষ। ইংরেজিতে 'বুক' (book) অর্থ― বই। সেজন্য এক জাতির ভাষা অন্য জাতির ভাষা থেকে আলাদা। যেমনঃ বাঙালিদের ভাষা বাংলা, আরবদের ভাষা আরবি, ইংরেজদের ভাষা ইংরেজি, ফ্রান্সের মানুষের ভাষা ফরাসি, ইরানের মানুষের ভাষা ফারসি, চীনের অধিকাংশ মানুষের ভাষা ম্যান্ডারিন। আবার বাংলাদেশে বাংলার পাশাপাশি চাকমা জনগোষ্ঠী চাংমা ভাষায়, গারো জনগোষ্ঠী আচিক ভাষায় কথা বলে।

ভাষা পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীলতার কারণে ভাষাকে প্রবহমান নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়। পৃথিবীর কোনো ভাষাই স্থির থাকে না। ভাষা স্থির হয়ে গেলে তা মৃত ভাষায় পরিণত হয়।

Comments

Popular posts from this blog

ই-বুক রিডার বলতে কি বোঝ?

প্রশ্নঃ ই-বুক রিডার বলতে কি বোঝ? উত্তরঃ ইলেক্ট্রনিক বুক রিডার এর সংক্ষিপ্ত রুপ হচ্ছে ই-বুক রিডার। সাধারণ ই-বুক হচ্ছে ছবি ও লেখা সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল সিস্টেম যেতি কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইস দিয়ে পড়া যায়। ই-বুক রিডার হচ্ছে ই-বুক পড়ার একটি সফটওয়্যার। ই-বুক রিডার এ সহস্রাধিক বই ডাউনলোড করে রাখা যায়। পরবর্তীতে ইচ্ছানুযায়ী যে কোন বই ওপেন করে সাধারণ বইয়ের মত পড়া যায়। বইয়ের মত এখানে পাতা উল্টানো যায়। প্রয়োজনে যে কোনো পৃষ্ঠায় চলে যাওয়া যায়। 

শিক্ষাসফরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে দরখাস্ত লেখো।

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বরাবর  প্রধান শিক্ষক  ময়মনসিংহ গার্লস স্কুল  বিষয়ঃ শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও অনুমতি প্রদানের আবেদন। জনাব, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা আপনার স্কুলের 'ক' শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমরা ঠিক করেছি  শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিক্ষাসফরে কুয়াকাটা যাব। সেখানকার সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করব। শিক্ষাসফরে আমরা তিন দিন থাকব। আর এ তিন দিনে আমাদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। আমাদের পক্ষে এতো টাকা বহন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। আপনার অনুমতি পেলে আমরা এ টাকার অর্ধেক নিজেরা চাঁদার মাধ্যমে সংগ্রহ করব।  অতএব বিনীত প্রার্থনা, এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাধিত করবেন।  বিনীত  'ক' শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পক্ষে  মারজিয়া রহমান  রোল নম্বরঃ ০২

সাধু ভাষারীতি এবং চলিত ভাষারীতি

  সাধু ভাষারীতি এবং চলিত ভাষারীতি সাধু ভাষারীতিঃ যে ভাষারীতি অধিকতর গাম্ভীর্যপূর্ণ, তৎসম শব্দবহুল, ক্রিয়াপদের রুপ প্রাচীনরীতি অনুসারী এবং আঞ্চলিকতামুক্ত তা-ই সাধু ভাষারীতি। যেমনঃ এক ব্যক্তির দুইটি পুত্র ছিল। চলিত ভাষারীতিঃ ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানসমূহের মৌখিক ভাষারীতি মানুষের মুখে মুখে রূপান্তর লাভ করে প্রাদেশিক শব্দাবলি গ্রহণ এবং চমৎকার বাকভঙ্গির সহযোগে গড়ে ওঠে। এই ভাষারীতিকেই চলিত ভাষারীতি বলে। যেমনঃ একজন লোকের দুটি ছেলে ছিল। সাধু ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য ক. সাধু ভাষার রুপ অপরিবর্তনীয়। অঞ্চলভেদে বা কালক্রমে এর কোনো পরিবর্তন হয় না। খ . এ ভাষারীতি ব্যাকরণের সুনির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে চলে। এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট। গ . সাধু ভাষারীতিতে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এ ভাষায় এক প্রকার আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য আছে। ঘ . সাধু ভাষারীতি সুধু লেখায় ব্যবহার হয়। তাই কথাবার্তা, বক্তৃতা, ভাষণ ইত্যাদির উপযোগী নয়। ঙ . সাধু ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পূর্ণরুপ  ব্যবহৃত হয়। চলিত ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য ক . চলিত ভাষা সর্বজনগ্রাহ্য মার্জিত ও গতিশীল ভাষা। তাই এটি মানুষের কথাব...