ক্ষমার প্রতিদান
রাসুল (সাঃ) একদিন মসজিদে বসে আছেন। সাহাবীরা তাঁকে ঘিরে আছেন। এমন সময় রাসুল (সাঃ) বললেন, "এখন যিনি মসজিদে প্রবেশ করবেন, তিনি বেহেশতের অধিবাসী।"
একথা শুনে উপস্থিত সব সাহাবী (রাঃ) অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকলেন মসজিদের প্রবেশ মুখে। সবার মধ্যে জল্পনা কল্পনা চলছে হয়তো হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বা হযরত উমর (রাঃ) অথবা এমন কেউ আসছেন যাঁদের বেহেশতের সুসংবাদ আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন।
কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলেন একজন সাধারণ আনসার সাহাবী। এমনকি তার নাম পরিচয় পর্যন্ত জানা ছিল না অধিকাংশের। এরপরের দিনেও সাহাবীরা মসজিদে বসে আছেন রাসুল (সাঃ) কে ঘিরে। রাসুল (সাঃ) আবার বললেন, "এখন যিনি মসজিদে প্রবেশ করবেন, তিনি বেহেশতের অধিবাসী।" সেদিনও মসজিদে প্রবেশ করলেন সেই সাহাবী।
তৃতীয় দিন রাসুল (সাঃ) সাহাবিদের লক্ষ্য করে আবার ঘোষণা দিলেন, "এখন যিনি মসজিদে প্রবেশ করবেন, তিনি বেহেশতের অধিবাসী।" এবং সাহাবীরা দেখলেন সেই অতি সাধারণ সাহাবীটিই মসজিদে প্রবেশ করলেন। পরপর তিনদিন এই ঘটনা ঘটার পর সাহাবীদের মধ্যে কৌতূহল হলো সেই সাধারণ সাহাবী সম্পর্কে জানার জন্য। তিনি কেন অন্যদের চেয়ে আলাদা তা জানতে হবে।
বিখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আমর আল আ'স (রাঃ) ভাবলেন, এই সাহাবীর বিশেষ গুণ কি তা জানা দরকার তাই তিনি সেই সাহাবীর কাছে গিয়ে বললেন, "আমার বাবার সাথে আমার মনোমালিন্য হয়েছে, তোমার বাড়িতে কি আমাকে তিন দিনের জন্য থাকতে দেবে?"
সেই সাহাবী রাজী হলেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন, খুঁজতে থাকলেন কি এমন আমল তিনি করেন। সারা দিন তেমন কোন কিছু চোখে পড়ল না। তিনি ভাবলেন হয়তো তিনি রাত জেগে ইবাদত করেন। কিন্তু না, রাতের সালাত পড়ে তো তিনি ঘুমাতে চলে গেলেন।
উঠলেন সেই ফজর পড়তে। পরের দুটি দিনও এভাবে কেটে গেল। হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) কোন বিশেষ আমল বা আচরণ খুঁজে পেল না যা অন্যদের চেয়ে আলাদা।
তাই তিনি সরাসরি সেই সাহাবীকে বললেন, "দেখ আমার বাবার সাথে আমার কোন মনোমালিন্য হয়নি, আমি তোমাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য তোমার বাড়িতে ছিলাম। কারণ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে তুমি জান্নাতি। আমাকে বল তুমি আলাদা কি এমন আমল করো?"
সেই সাহাবী বললেন, "তুমি আমাকে যেমন দেখেছ আমি তেমনই, আলাদা কিছুতো আমার মনে পড়ছে না।" এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে বিদায় জানিয়ে চলে যেতে থাকলেন।
এমন সময় সেই সাহাবী আব্দুল্লাহ (রাঃ) কে ডেকে বললেন, আমার একটা আচরণের কথা তোমাকে বলা হয়নি-
"প্রতি রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দেই, যারা আমাকে কষ্ট দিয়েছে বা আমার প্রতি অন্যায় করেছে। তাদের প্রতি কোন ক্ষোভ আমার অন্তরে আমি পুষে রাখি না" হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, "এ জন্যই তুমি আলাদা, এ জন্যই তুমি জান্নাতি"। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ সুবহানাল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।

Comments
Post a Comment
👉 মন্তব্যের ক্ষেত্রে পড়াশোনা বিডির নিয়মাবলী পড়তে ক্লিক করুন এখানে।