Skip to main content

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

সুচনাঃ মানুষের জীবনে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা অর্জনের সময়টিই হচ্ছে ছাত্রজীবন। এ সময়ের রুচিত হয় মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি। লেখাপড়ার পাশাপাশি সুন্দর জীবন গঠনের শিক্ষা এ সময়েই অর্জন করতে হয়। এক্ষেত্রে সামান্য অবহেলা গোটা জীবনকেই নষ্ট করে দিতে পারে। তাই ছাত্রজীবনে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে প্রয়োজন সতর্কতা, নিষ্ঠা ও সমুজ্জ্বল জীবনাদর্শ।

ছাত্রজীবনঃ বৃহত্তম অর্থে মানুষের সমস্ত জীবনই ছাত্রজীবন। তবে সীমিত অর্থে ছাত্র জীবন বলতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনকে বোঝায়। মানুষ ছেলেবেলায় প্রথমে মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনের কাছে অনেক কিছু শেখে। এরপর শিক্ষার আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি হয় প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এখান থেকেই মানুষের প্রকৃত ছাত্রজীবন শুরু হয়।

ছাত্রজীবনের লক্ষ্যঃ ভবিষ্যৎ জীবন নানাবিধ সম্ভবনা ও প্রতিকূলতায় পরিপূর্ণ। সেই সম্ভবনাগুলোকে বিকশিত করা ও প্রতিকূলতাগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়। মানবজীবনের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের মতো মানুষ হওয়া। আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিজের চরিত্রকে গড়ে তুলতে হয়। চরিত্রে যেন অধ্যবসায়। সহানুভূতি, দেশপ্রেম, শিষ্টাচার ইত্যাদি সদগুণের স্থায়ী সমাবেশ ঘটে সেই লক্ষে ছাত্রজীবন থেকেই এগুলোর চর্চা করতে হয়। এককথায়, ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হলো নিজেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলার সাধনা করা।

ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ছাত্রজীবনের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে লেখাপড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা। এর জন্য ছাত্রদের অত্যন্ত পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী হতে হয়। সময়ের মূল্য অনুধাবন করে তার সর্বোত্তম ব্যবহার করা ছাত্রদের অন্যতম দায়িত্ব। নিজেকে মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট থাকা ছাত্রজীবনের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

লেখাপড়াঃ ছাত্রজীবনে অর্জিত জ্ঞানের ওপরই নির্ভর করে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের প্রকৃতি। এজন্য চাই সুশৃঙ্খল ও মানসম্মত লেখাপড়া। নির্ধারিত পাঠ্যবইগুলো নিবিষ্ট মনে আগ্রহের সঙ্গে পাঠ করা তার প্রথম কাজ। পাঠ বোঝা এবং বলে বা লিখে তা প্রকাশ করতে পারাই লেখাপড়ার প্রাথমিক লক্ষ্য। কিন্তু কেবল মুখস্থ করে এ লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। ভালো ভালো লেখকের বিভিন্ন বই পড়ে মনকে প্রসারিত করতে হয়। আলোচনা ও বিতর্কে অংশ নিয়ে চিন্তাশক্তির প্রসার ঘটাতে হয়। বিশেষ করে বয়স ও শ্রেণি-উপযোগী বিভিন্ন বই এবং চারপাশের দৈনন্দিন জীবন থেকেও জীবনের পাঠ নেওয়া দরকার।

স্বাস্থ্য রক্ষাঃ দেহমন সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্য-পরিচর্যা ছাত্রজীবনের একটি প্রধান কর্তব্য। দেহ ও মন সুস্থ না থাকলে লেখাপড়ায় ব্যঘাত ঘটে। তাই স্বাস্থ্য রক্ষার সচেষ্ট হওয়া দরকার। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিমিত আহার, নিয়মিত ব্যায়াম ও সময়মতো খেলাধুলা করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

[post_ads]

শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতাঃ ছাত্রজীবনে শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি দরকার শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা অনুশীলন। সফল ও সার্থক জীবন গড়ার এ এক অপরিহার্য শর্ত। এজন্য শিক্ষক ও মাতাপিতার নির্দেশনা অনুযায়ী দৈনন্দিন কাজ, লেখাপড়া, খেলাধুলা ইত্যাদি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী করতে হবে। ঘরে মা-বাবা এবং স্কুলে শিক্ষক হলে ছাত্রদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী। তাই তাদের মেনে চলা ও শ্রদ্ধা করা উচিত। অন্য যারা বয়সে বড় তাদেরও সম্মান করতে হবে।

সহপাঠীদের সঙ্গে প্রীতির সম্পর্কঃ ছাত্রজীবনে সহপাঠীদের সঙ্গে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের। পড়ালেখা, খেলাধুলা, ভাব বিনিময়সহ সব কাজ মিলেমিশে করলে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাতে আনন্দ ও সুখ পাওয়া যায়।

অধ্যবসায়ঃ ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অত্যধিক। অপেক্ষাকৃত কম মেধাসম্পন্ন ছাত্র অধ্যবসায়ী হলে সাফল্যলাভে সক্ষম হয়। তাছাড়া ছাত্রজীবনে বিভিন্ন চারিত্রিক গুণগুলোর নিরন্তর অনুশীলনের জন্যও চাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞা। অধ্যবসায়ী ছাত্ররাই ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

চরিত্রগঠনঃ ছাত্রজীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেকে মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার সাধনা করতে হয়। তাই বিদ্যা-অর্জনের পাশাপাশি ছাত্রজীবনে চরিত্রগঠনের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ছাত্রজীবনের মূল আদর্শ হওয়া উচিত সততা। সেইসঙ্গে চাই নিষ্ঠা, সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অনুশীলন। বিনয়ী, সেবাপরায়ণ ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার কাজ ছাত্রজীবনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণঃ ছাত্রজীবনে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত সিলেবাসের গণ্ডিতে আটকে রাখলে যথার্থ উৎকর্ষ লাভ করা সম্ভব হয় না। এর পাশাপাশি ছাত্রদের বিভিন্ন সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। বিজ্ঞান ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, স্কাউটিং, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ ছাত্রদের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, জ্ঞানের ভাণ্ডার ও অভিজ্ঞতা দুটিই সমৃদ্ধ হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার শিক্ষা নেওয়া উচিত।

উপসংহারঃ ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক। এগুলো মেনে চলার মাধ্যমেই ছাত্ররা নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। জীবনকে সার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই সচেষ্ট থাকতে হবে।

Comments

Popular posts from this blog

ই-বুক রিডার বলতে কি বোঝ?

প্রশ্নঃ ই-বুক রিডার বলতে কি বোঝ? উত্তরঃ ইলেক্ট্রনিক বুক রিডার এর সংক্ষিপ্ত রুপ হচ্ছে ই-বুক রিডার। সাধারণ ই-বুক হচ্ছে ছবি ও লেখা সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল সিস্টেম যেতি কম্পিউটার বা অন্যান্য ডিভাইস দিয়ে পড়া যায়। ই-বুক রিডার হচ্ছে ই-বুক পড়ার একটি সফটওয়্যার। ই-বুক রিডার এ সহস্রাধিক বই ডাউনলোড করে রাখা যায়। পরবর্তীতে ইচ্ছানুযায়ী যে কোন বই ওপেন করে সাধারণ বইয়ের মত পড়া যায়। বইয়ের মত এখানে পাতা উল্টানো যায়। প্রয়োজনে যে কোনো পৃষ্ঠায় চলে যাওয়া যায়। 

শিক্ষাসফরে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে দরখাস্ত লেখো।

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বরাবর  প্রধান শিক্ষক  ময়মনসিংহ গার্লস স্কুল  বিষয়ঃ শিক্ষাসফরে যাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও অনুমতি প্রদানের আবেদন। জনাব, সবিনয় নিবেদন এই যে, আমরা আপনার স্কুলের 'ক' শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমরা ঠিক করেছি  শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিক্ষাসফরে কুয়াকাটা যাব। সেখানকার সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করব। শিক্ষাসফরে আমরা তিন দিন থাকব। আর এ তিন দিনে আমাদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। আমাদের পক্ষে এতো টাকা বহন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা আপনার সহযোগিতা কামনা করছি। আপনার অনুমতি পেলে আমরা এ টাকার অর্ধেক নিজেরা চাঁদার মাধ্যমে সংগ্রহ করব।  অতএব বিনীত প্রার্থনা, এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাধিত করবেন।  বিনীত  'ক' শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পক্ষে  মারজিয়া রহমান  রোল নম্বরঃ ০২

সাধু ভাষারীতি এবং চলিত ভাষারীতি

  সাধু ভাষারীতি এবং চলিত ভাষারীতি সাধু ভাষারীতিঃ যে ভাষারীতি অধিকতর গাম্ভীর্যপূর্ণ, তৎসম শব্দবহুল, ক্রিয়াপদের রুপ প্রাচীনরীতি অনুসারী এবং আঞ্চলিকতামুক্ত তা-ই সাধু ভাষারীতি। যেমনঃ এক ব্যক্তির দুইটি পুত্র ছিল। চলিত ভাষারীতিঃ ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী স্থানসমূহের মৌখিক ভাষারীতি মানুষের মুখে মুখে রূপান্তর লাভ করে প্রাদেশিক শব্দাবলি গ্রহণ এবং চমৎকার বাকভঙ্গির সহযোগে গড়ে ওঠে। এই ভাষারীতিকেই চলিত ভাষারীতি বলে। যেমনঃ একজন লোকের দুটি ছেলে ছিল। সাধু ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য ক. সাধু ভাষার রুপ অপরিবর্তনীয়। অঞ্চলভেদে বা কালক্রমে এর কোনো পরিবর্তন হয় না। খ . এ ভাষারীতি ব্যাকরণের সুনির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ করে চলে। এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট। গ . সাধু ভাষারীতিতে তৎসম বা সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার বেশি বলে এ ভাষায় এক প্রকার আভিজাত্য ও গাম্ভীর্য আছে। ঘ . সাধু ভাষারীতি সুধু লেখায় ব্যবহার হয়। তাই কথাবার্তা, বক্তৃতা, ভাষণ ইত্যাদির উপযোগী নয়। ঙ . সাধু ভাষারীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের পূর্ণরুপ  ব্যবহৃত হয়। চলিত ভাষারীতির বৈশিষ্ট্য ক . চলিত ভাষা সর্বজনগ্রাহ্য মার্জিত ও গতিশীল ভাষা। তাই এটি মানুষের কথাব...